ম্যাডহুমেট (Madhumet) এ আছে Metformin (মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড)। ম্যাডহুমেট (Madhumet) এর কাজ, খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মাত্রা ও সেবনবিধি, সতর্কতা, মিথষ্ক্রিয়া, গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার, মাত্রাধিক্যতাঃ
মেটফরমিন হচ্ছে বাইগুয়ানাইড ধরনের মুখে সেব্য ডায়াবেটিস বিরোধী ঔষধ যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। এটি স্বাভাবিক অবস্থায় ও খাবারের পর রক্তে Glucose এর পরিমাণ কমায়। এর কার্যপ্রনালী সালফোনাইলইউরিয়া থেকে ভিন্ন এবং এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া করে না। মেটফরমিন যকৃতের Glucose এর উৎপাদন কমায়, অন্ত্রের Glucose শোষণ কমায় এবং পেরিফেরাল Glucose গ্রহণ ও ব্যবহারকে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নতি করে।
কাজ
খাদ্য নিয়ন্ত্রন ও ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী ও শিশুদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিত। মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড খাদ্য নিয়ন্ত্রন ও ব্যায়মের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিত।
থেরাপিউটিক ক্লাস
Biguanidesমাত্রা ও সেবনবিধি
কার্যকারিতা ও সহনশীলতার ভিত্তিতে এবং সর্বোচ্চ দৈনিক বিক্রির প্রতি লক্ষ্য রেখে মেটফরমিন এর মাত্রা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মেটফরমিন এর দৈনিক নির্দেশিত মাত্রা হচ্ছে ২৫৫০ মিগ্রা. এবং ১০-১৬ বছরের শিশুদের শিশুদের ক্ষেত্রে তা ২০০০ মিগ্রা।
অন্যদিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর সর্বোচ্চ দৈনিক নির্দেশিত মাত্রা হচ্ছে ২০০০ মিগ্রা। বিগমেট বিভক্ত মাত্রায় খাবারের সাথে এবং সাধারণত প্রতিদিন রাতে একবার খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত। মেটফরমিন কখনোই চুষে বা ভেঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। প্রারম্ভিক মাত্রা যতদুর সম্ভব কম হওয়া উচিত যাতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কাঙ্খিত অবস্থায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন প্রয়োগমাত্রা নিরুপণ করা যায় এবং সেই সাথে পরিপাকতন্ত্রের অস্বস্তিও যেন কম হয়।
গ্রহনীয় নির্দেশিত মাত্রাঃ
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: মেটফরমিন এর সাধারণ প্রারম্ভিক মাত্রা হচ্ছে ৫০০ মিগ্রা দিনে ২ বার অথবা ৮৫০ মিগ্রা. দিনে ১ বার খাবারের সাথে। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ মিগ্রা অথবা প্রতি ২ সপ্তাহে ৮৫০ মিগ্রা. বিভক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি করে দৈনিক সর্বোচ্চ গ্রহন মাত্রা ২০০০ মিগ্রা. পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। প্রারম্ভিক মাত্রা দৈনিক ২ বার ৫০০ মিগ্রা থেকে ২ সপ্তাহ পর দৈনিক ২ বার ৮৫০ মিগ্রা. মাত্রা প্রয়োগ করে রোগীদের পর্যবেক্ষন করা যেতে পারে। দৈনিক মোট মাত্রা ২০০০ মিগ্রা. এর উপরে হলে তা রোগীদের সহনশীলতার জন্য ৩ বার বিভক্ত মাত্রায় খাবারের সাথে গ্রহণ করা যেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রেঃ মেটফরমিন এর সাধারণ প্রারম্ভিক মাত্রা হচ্ছে প্রতিবার খাবারের সাথে ৫০০ মিগ্রা. করে দৈনিক ২ বার। মাত্রা বৃদ্ধির হার হওয়া উচিত সপ্তাহে ৫০০ মিগ্রা. করে বিভক্ত মাত্রায় দৈনিক সর্বোচ্চ ২০০০ মিগ্রা. পর্যন্ত। মেটফরমিন এর নিরাপদ ব্যবহার এবং কার্যকারিতা ১০ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, পেটফাঁপা, দূর্বলতা, বদহজম, পেটে অস্বস্তি, মাথা ব্যথা, ইত্যাদি।
সতর্কতা
মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড কিডনির মাধ্যমে দেহ থেকে ধীরে ধীরে বের হয়। তাই শরীরে মেটফরমিন জমা হওয়া ও ল্যাকটিক এসিডোসিস হওয়ার সম্ভাবনা কিডনির অক্ষমতার মাত্রার উপর নির্ভর করে। মেটফরমিন শরীরে ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কমায় এবং ইনসুলিন বা ইনসুলিন সিক্রেটোগগ এর সাথে একত্রে ব্যবহারে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া
কার্বোনিক অ্যানহাইড্রাস (টপিরাম্যাট, জোনিস্যামাইড) এর সাথে একত্রে ব্যবহারে ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যে সকল ঔষুধ (রেনোলাজিন, ডলুটেগ্রাভির, সিমেটিডিন) মেটফরমিন ক্লিয়ারেন্সকে হ্রাস করে, তাদের সাথে একত্রে ব্যবহারে শরীরে মেটফরমিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। অ্যালকোহল ল্যাকটেট মেটাবোলিজম এর উপর মেটফরমিন এর প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার
প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরি-বি। অধিকাংশ চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা করানো উত্তম। মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড খুব প্রয়োজন ছাড়া গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা উচিত নয়।
স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ব্যবহারঃ এ অবস্থায় যেহেতু হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেহেতু অবস্থার গুরুত্ব বুঝে স্তন্যদান বা ঔষধ দুটোর যেকোন একটা বেছে নেয়া যেতে পারে।
মাত্রাধিক্যতা
হাইপোগ্লাইসেমিয়া 85g অবধি মেটফর্মিন ডোজগুলির সাথে দেখা যায়নি, যদিও ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে। মেটফরমিনের উচ্চ মাত্রা বা সহজাত ঝুঁকির কারণে ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস হতে পারে। ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস একটি চিকিত্সা জরুরি এবং এটি অবশ্যই হাসপাতালে চিকিত্সা করা উচিত। ল্যাকটেট এবং মেটফর্মিন অপসারণের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিমোডায়ালাইসিস।
প্রতিলক্ষণ
প্রতিনির্দেশনাঃ মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে নাঃ
কিডনীর সমস্যা বা অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে (রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা মহিলাদের ১.৪ মিগ্রা./ডেসিলিটার বা পুরুষদের ক্ষেত্রে ১.৫ মিগ্রা./ডেসিলিটার এর বেশি হলে অথবা মুত্রে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন হলে)।বিগমেট বা এর যেকোন উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা।স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী মেটাবোলিক এসিডোসিস, কোমা বা কোমাব্যতিত ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস।বিশেষ সতর্কতা
চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে বিগমেট শরীরে সঞ্চয়ের ফলে ল্যাকটিক এসিডোসিস হতে পারে যদিও এ ধরণের ঘটনা কদাচিৎ ঘটে।
অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া
ফুসেমাইড, নিফেডিপিন, ক্যাটায়নিক ওষুধসমূহ, থায়াজাইড ও অন্যান্য মূত্র বর্ধক, কর্টিকোস্টেরয়েড, ফেনােথায়াজিন, থাইরয়েড প্রােডাক্টস, ইস্ট্রজেন, মুখে খাওয়ার জন্মনিরােধক বড়ি, ফেনাইটয়েন, নিকোটিনিক এসিড, সিমপ্যাথােমিমেটিক্স, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং আইসােনিয়াজাইড।
মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ও ফুরোসেমাইড একত্রে সেবনে দীর্ঘমেয়াদী কোনো প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। নিফিডিপিন বিগমেট এর শোষন বাড়ালেও নিফিডিপিনের উপর বিগমেট এর সামান্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ক্যাটায়নিক ড্রাগ যারা কিডনীর মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে নিষ্কাশিত হবার সময় বিগমেট এর সাথে প্রতিযোগীতার সম্মুখিন হতে পারে।
সিমেটিডিনের ফার্মাকোকাইনেটিক বৈশিষ্ট্যের উপর মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এর কোনো প্রভাব নেই। কিছু কিছু ঔষধ যেমন থায়াজাইড এবং অন্যান্য মুত্রবর্ধক , কর্টিকোস্টেরয়েড, ফেনোথায়াজিন, থাইরয়েড প্রডাক্ট, ইস্ট্রোজেন, মুখে খাবার জন্মনিরোধক, ফিনাইটোয়েন, নিকোটিনিক এসিড, সিমপ্যাথোমিমেটিক, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং আইসো সরবাইড হাইপোগ্লাইসেমিয়া তৈরী করতে পারে এবং এসব ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
সংরক্ষণ
শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে সংরক্ষণ করবেন না। আলো এবং আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করার জন্য মূল প্যাকেজটি একটি শীতল ও শুকনো স্থানে রাখুন।